আবার দেখা হবে
গাঁ ছমছমে গভীর রাতে কোথা থেকে যেন একটা চিৎকার ভেসে আসছে আর তার সাথেই একটা রহস্যময় হাসি। সকাল বেলা মা ঘুম থেকে উঠে আতিক কে ডাকতে গেছে। কিন্তু আতিক আজ ঘরে নেই। মা উঠানে গিয়েই একটা চিৎকার করেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে। বাড়ির সবাই এলো সাথে পাড়াপ্রতিবেশিরাও। সবারই আমগাছটার দিকে চেয়ে গাঁ চমকে উঠেছে আর সাথেই অনেকে ভয়ে কুঁকড়াচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর বাড়িতে পুলিশ আসলো। তারা দেখেও কিছুটা ভয় পেয়েছে। আধপোড়া আতিকের দেহটা
ফাঁসিতে ঝুলানো। আর সাথে গলায় ঝুলানো একটা কার্ডে লেখা শুভ জন্মদিন। আধপোড়া দেহটা নিচে নামালো পুলিশ। সারা শরীরে এমন কোনো জাইগা নেই যেখানে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়নি। এক চোখ হাতুড়ি দিয়ে মেরে নষ্ট করে দিয়েছে। চুলগুলো দিয়ে কপাল ডেকে ছিল। চুল সরাতেই দেখে কপালে ছুরি দিয়ে গর্ত করে লেখা আবার দেখা হবে।
মাকে সবাই মিলে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করছে কিন্তু সে আতিক এর চেহারা দেখেই আবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে বার বার। পুলিশ পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞেস করল যে তাদের কোন শত্রু আছে কিনা যাকে তারা সন্দেহ করে। সবার উত্তর এ নাহ। তারপর পুলিশ বলল আপনাদের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হয়েছে কি কাল। তখন বাবা বলল হ্যাঁ। কাল আতিকের জন্মদিন ছিল। আতিকের লাশটা তারা নিয়ে গেল পুলিশ স্টেশনে পোস্টমর্টেম এর জন্য।
ডাক্তার দেখেই বলল যে এটা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ নাহ। এটা হয়তো কোন সাইকো না সিরিয়াল কিলার এর কাজ। এতো নিখুঁত ভাবে মেরেছে যে কোনো প্রকার চিহ্ন পর্যন্ত রেখে যায় নি।
ডাক্তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পুলিশ এর হাতে দিল তারা ওইটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে দিয়ে গেল। আর সাথেই বলে গেল এটা একটা সাইকোর কাজ। সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব নয়। আপনারা যদি কোনো চিহ্ন বা কোনো কিছু অন্য রকম মনে হয় আমাদের সাথে সাথে জানাবেন। যাওয়ার আগে তারা আবার ওই জাইগা টা একটু খুঁজাখুজি করে একটা বেহালার তার পাইলো। কিন্তু আমাদের কিছু না জানিয়ে পুলিশ গুলো চলে গেলো।
পুরো মহল্লায় ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই আতংকে পড়ে গেছে। কেউ কেউ তো তাদের ছেলে-মেয়েদের রাতের বেলা বাড়ি থেকে বের হতে দেয় নাহ। দুইদিন আবার সব কিছু শান্ত হয়ে থাকলো।
সবাই ভাবলো সব কিছু আবার ঠিক হয়ে গেছে আগের মতো। পরের দিন ঘটলো সেই আগের মতো ঘটনা। এবার কোন ছেলে ছিল নাহ। ছিল ক্লাস ১০ এ পড়া এক মেয়ে যার নাম মুন্নী। তারও কাল জন্মদিন ছিল। মুন্নী আর আতিক দুইজন দুই মহল্লায় থাকতো। কিন্তু তাদের খুন করা হলো একইভাবেই।
এইবার এই বিষয়টা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ল। মুন্নীরও শরীর আধপোড়া ছিল, দেহতে অনেক আঘাত আর একইভাবে কপালে ছুরি দিয়ে গর্ত করে লেখা আবার দেখা হবে। আবারও পাওয়া গেল একটা বেহালার তার। পুলিশরা কিছুই বুঝতে পারছিল নাহ। কোন চিহ্নমাত্র রেখে যায় নাহ। তাহলে তারা কিভাবে ওই সাইকো খুঁজে বের করবে।
যত দিন যাচ্ছে লোকজনের চোখে-মুখে ভয়ের একটা ছাপ লেগে রয়েছে। আরও ৩ টা খুন হল একইভাবে। একই রকম সেই বেহালার তার আর কপালে লেখা আবার দেখা হবে। শহরের যে ছেলে বা মেয়ের জন্মদিন থেকে তারপরের দিন তার লাশ পাওয়া যায় ওইভাবে। তাই সবাই যেন জন্মদিন পালন করাই বন্ধ করে দিয়েছে।
পুলিশরা একটা বিষয় জানতে পেরেছে যে খুনগুলো জন্মদিন এর রাতেই করা হয়। এর মানে ওই সাইকোর জন্মদিন এর সাথে কোন একটা সম্পর্ক আছে।
শহরে নতুন এক পরিবার আসলো। তাদের এক ছেলের জন্মদিন আর ৭ দিন পর। তারা জানে না যে এই শহরে এতোদিন কি হয়েছে। পুলিশরা খুঁজে বের করতে লাগলো কার কবে জন্মদিন। ওই ছেলে টার বাবা ওকে বেহালা শেখানোর জন্য একটা স্যার এর কাছে দিয়ে আসে। এই শহরে একটাই বেহালা শিক্ষক। তিনি আবার স্কুলের গণিত বিষয়ে ক্লাস নেয়। তিনি সবার কাছেই প্রিয় একজন শিক্ষক।
ছেলেটা খুব তারাতারি বেহালা বাজাতে শিখে যায়।
তাই সে স্যার এর প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠে। কাল আমার জন্মদিন স্যার কাল কিন্তু আপনাকে আমার বাড়িতে অবশ্যই আসতে হবে। আচ্ছা আমি অবশ্যই যাব আর তোমার জন্য সেরা একটি মূহুর্ত উপহার দিব কাল। আচ্ছা স্যার আজ তাহলে আসি। এই বলেই আসিফ সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসলো। পুলিশ আসিফ এর বাড়িতে গিয়ে তাদের সাবধান হতে বলল। আসিফের বাবা দেখে কিছু লোক কে আমন্ত্রণ করলো। পুলিশ ওদের বাড়ি লুকিয়ে পাহারা দিচ্ছিল। জন্মদিন এর অনুষ্ঠান ভালো ভাবেই শেষ হল। সবাই ভাবলো আজ আর কিছুই হবে নাহ। স্যার আসতে একটু দেরি করল। সে আসিফের জন্য একটা অনেক পুরানো বেহালা নিয়ে এসেছে। ওইটা দিয়েই স্যার চলে গেলো।
বাড়ির সব লাইট নিভিয়ে দেওয়া হল। সবাই প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। পুলিশ আজ এখনো ওদের বাড়ি আশেপাশের আছে। হঠাৎ করেই বেহালার শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে। পুলিশ গুলো দৌড়ে ওদের বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখে আসিফ এর লাশ ঝুলানো আছে। আর কে যেন বেহালা হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
পুলিশ দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে ধরে থানায় নিয়ে গেল। তাকে তার নাম বলতে বলা হলো কিন্তু সে কোন কথা বলছিল নাহ। একজন পুলিশ মোবাইল এ কার সাথে যেন কথা বলছিল আর বলছে আজ ওই সাইকো কে আমরা ধরে ফেলেছি। তখন ও এক রহস্যকর হাসি দিয়ে বলে ওরে মুর্খ পুলিশ তুই আমাকে ধরিস নি আমি নিজে ধরা দিয়েছি।
আমার নাম এলেন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমার পুরো পরিবার এই শহরে থাকতে এসেছিল। কিন্তু আমাদের সাথে তো কেউ ভালো ব্যবহার করতোই না বরং আমাদের নানাভাবে অত্যাচার করতো। একদিন আমি বাড়ি থেকে দূরে এক শহরে যায় একটা বই কিনতে। আমার ছোট ভাই এর গল্পের পড়তে খুব ভালো লাগতো। তাই ওর জন্মদিনে ওইটা উপহার দিতে চেয়ে ছিলাম আমি।
কিন্তু এসে দেখি এখনকার লোকজন মিলে আমার পুরো পরিবার কে আগুনে ঝালিয়ে দিয়েছে। ওইদিন আমার ভাই এর জন্মদিন ছিল। আমরা দেখতে তো ভালো ছিলাম নাহ। এটা কি আমাদের দোষ ছিল। সৃষ্টিকর্তা আমাদের ওইভাবে বানিয়েছেন তাতে আমাদের দোষ কই। আমি এসে দেখি সবাই মারে গেছিল শুধু ছোট ভাই আধপোড়া অবস্থাই ছিল আমাকে দেখেই কান্না করে বলছিল ভাইয়া আমি বাচঁতে চাই।
আমি ওর যেতে যেতেই ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ওর গাঁয়ে যে টি-শার্ট পড়া ছিল ওখানে লিখা ছিল আবার দেখা হবে। এরপর আমি এখন থেকে চলে যায়। চিকিৎসা করে আমার চেহারা বদলে আবার ফিরে আসি বদলা নিতে। আর একের পর এক খুন করতে থাকি। ওদের বুঝতে হবে যে খুব কাছের মানুষজন মারা গেলে কেমন লাগে।
আমার বদলা নেওয়া শেষ এখন আমাকে যদি ফাঁসিও দেওয়া হয় তাতেও আমার দুঃখ নেই। আচ্ছা কাল তোমাকে আদালতে হাজির করা হবে। আমার বেহালাটা দেবেন একটু আজ মন খুলে বাজাবো। আচ্ছা ওর বেহালাটা ওকে দাও। ধন্যবাদ স্যার। সব পুলিশ আজ শান্তির ঘুম ঘুমাবে। তারা তাদের অন্য কাজ করে যে যার যার রুমে চলে যায়। আমি বেহালা বাজাতে থাকলাম।
এক রহস্যময় হাসি হেসে বেহালা বাজানো বন্ধ হয়ে গেলো। সকাল পুলিশ এসে দেখে ও বেহালার তার দিয়ে নিজের গলা কেটে ফেলেছে। আর রক্ত দিয়ে দেওয়ালে বড় বড় করে লিখেছে আবার দেখা হবে...............
বিঃদ্রঃ ভুলগুলো ক্ষমার দ্রষ্টিতে দেখবেন। উপরোক্ত চরিত্রগুলোকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি নাহ। গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক।