অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প(সেই চিঠি )

কল্পকথার-রাজ্য
0




অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প(সেই চিঠি )


এক রৌদ্রময় দুপুরে একা একা হাঁটতেছিলাম।হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটা চিঠির খাম উড়ে এসে আমার সামনে পড়ল।এরপর আমি খাম খুলে দেখি একটা চিঠি।ঠিকানাটা ঠিক বুঝা যাচ্ছিল নাহ। কিন্তু তারিখটা একটু বুঝা যাচ্ছে।

২১শে শ্রাবণ ১৯৪৩,

প্রিয় বাবা,

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি। কিন্তু আজ কেন জানি আপনার আর মার কথা খুব মনে পড়তাসে।তাই চিঠি টা লিখলাম।আপনাদের দেখতেও খুব ইচ্ছা হয়তাসে।কিন্তু বাড়ি যেতে পারবো নাহ।অনেক চেষ্টা করার পর একটা চাকরি পাইসি আল্লাহর রহমতে আর আপনাদের দোয়ায়। আর নতুন অবস্থাই আমাকে খুব একটা ছুটি দেবে বলে মনে হয় না।আর একটা কথা আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি ও আমাকে পছন্দ করে।ভাবছিলাম চাকরি পাওয়ার পর আপনাকে আর মাকে বিষয়টা সরাসরি বলব।কিন্তু এখন যেতে না পেরে চিঠিতেই বলতে হলো।ওর বাবা ওর জন্য ছেলে দেখতাসে।ওর বাড়িতে ও আমার কথা বলে নি কারণ ও বাবা কে খুব ভয় পাই।তাই আমাকে বলছে আমি যেন আপনাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে বিয়ের কথা বলতে যাই।আপনি চিঠিটা পাওয়ার দুই-তিন দিন এর মধ্যেই এখানে চলে আসবেন।মাকে আমার সালাম দিবেন আর বলবেন আমি চাকরি পেয়ে গেসি।আল্লাহ হাফিজ। 

ইতি 

আপনার প্রিয় পুত্র

সৌমিক 

চিঠি টা পড়ে ঠিক ভালো করে কিছুই বুঝলাম নাহ।সামনে এগিয়ে দেখি একটা ডাইরি পরে আছে আর পাতাগুলো বাতাসে পাল্টে যাচ্ছে।ডাইরি টা হাতে নিয়ে দেখি ডাইরির উপরে লেখা আমার কাহিনি। আমি ডাইরি খুলে দেখলাম এটার মালিক এর নাম লেখা ছিল সৌমিক।তারপর বুঝতে পারলাম যে এখন থেকেই চিঠি টা উড়ে গেসে।আমার পড়তে খুব একটা ভালো লাগে নাহ। তারপরও চিঠি টা পড়ার পর মনে অন্য রকম ভাব কাজ করছিল। তাই পরতে শুরু করলাম।

দেখি চিঠিতে যা লিখা ছিল এখানেও তা লিখা আছে। আমি ওইটুকু বাদ দিয়ে পরের পাতা উল্টালাম।১৫ দিন হয়ে গেছে এখনো বাবা আসলো নাহ।এইদিকে প্রেমিকাও প্রতিদিন বলে বাবা আমার জন্য ভালো ছেলে পেয়ে গেলে তখন আর আমি কিছুই করতে পারব নাহ।

তুমি তারাতাড়ি তোমার বাবা কে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসো।এইভাবে আরও ৫ দিন কেটে গেলো। কিন্তু বাবার কোন খুঁজই পেলাম নাহ।অফিসে গিয়েও কাজে একটুও মন বসছিল না।সন্ধ্যায় প্রেমিকার সাথে দেখা হলো বলল

 বাবা আমার পাত্র ঠিক করেছে তারা কাল আমাকে দেখতে আসবে।যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তারপর আর আমি কিছু করতে পারব নাহ। তুমি যা করার তারাতাড়ি কর।এই বলেই ও চলে গেলো। আমি আমার বাড়িতে আসার পথে একটা বন্ধুর সাথে দেখা হলো ওকে সব বললাম।

আর বললাম ভাই খুব চিন্তা হচ্ছে আর চিন্তা না কমলে ভালো বুদ্ধি কিভাবে আসবে।বন্ধুরা কেমন হয় জানেনই তো একটা সিগারেট হাতে দিয়ে বলে এইটা খা সব চিন্তা দূর হয়ে যাব।এর আগে কখনো সিগারেট খাই নাই আমি তারপরও ওর কথা শুনে সিগারেট ধরালাম। খাওয়া পর আমার কেমন জানি একটা অস্থির অস্থির মনে হলো। তাই তারাতাড়ি বাড়ি চলে আসলাম। আর বিছানাতে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।সকাল হলো আমি খাবার খেয়ে অফিস গেলাম।আজ অফিসে অনেক কাজ।

তাই বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলো।বাড়ি আসতে আসতে ১২টা বেজে গেছে।বাড়িতে এসে দরজা খুলতে যাচ্ছি তখন পিছন থেকে কে যেনো ডাকছে।দেখি ওর ছোট ভাই ও এসে বলল ভাইয়া আপনার জন্য অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছিলাম।তারপর বলল কাল আপুর বিয়ে আপনি আজ রাতেই আপুকে দূরে কোথাও চলে যান।আমি আপনাদের সাহায্য করবো।আমি ওকে বললাম ভোর ৪ টার ট্রেন এর টিকিট কিনব তুমি তোমার আপুকে একটু আগেই তোমাদের বাড়ি থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত নিয়ে আসবে।

এরপর বলল আচ্ছা ভাইয়া আমি তাহলে এখন যাই অনেক রাত হয়ছে।আমি সাথে সাথে স্টেশন এ গিয়ে দুইটা টিকিট কাটলাম। বাড়ি ফেরার পথে পিয়ন কাকার সাথে দেখা সে বলল তোমার জন্য একটা চিঠি আসে।আমি বললাম কাকা ভালো আছেন। সে বলল হ্যাঁ বাবা।

 তুমি কেমন আছো।হ্যাঁ আমি ভালোই আছি।তোমার চিঠিটা নাও। চিঠি টা পড়ে এক মুহূর্তে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেলো।৫ দিন আগে বাবা মারা গেছে আর আমি আজ জানতে পারলাম।টিকিট দুটো ফেলে দিয়ে আমি আবার দৌড়ে রেলস্টেশনে গেলাম।

আর ট্রেন এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারপর ট্রেন করে বাড়ি আসলাম।দেখি মা আমার অপেক্ষায় বসে আছে। দুইচোখ ভরা পানি থাকার পরও মার সামনে না কাদার ভান করলাম।কারণ আমি কাদলে মা আরও ভেঙে পড়বে। মা আমাকে দেখেই হাও-মাউ করে কেদে ফেলল।তারপর মাকে নিয়ে বাবার কবর দেখতে গেলাম। বাবাকে আর শেষ দেখা দেখতে পেলাম নাহ। দুই দিন কেটে গেছে। 

ওরা দুইজন আমার জন্য রেলস্টেশনে সারারাত বসে ছিল।পরে সকাল বেলা ওদের বাবা এসে বাড়ি নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিসে।আমি যে চিঠি টা পাঠিয়েছিলাম সেই চিঠি টা আজ গ্রামের পিয়ন কাকা এসে দিয়ে গেল আর বলল চিঠি অনেকগুলো উল্টোপাল্টা হওয়ার কারণে ঠিক সময় দিতে পারি নি।সেই চিঠি টা হাতে নিয়ে বসে রইলাম।


#সেই-চিঠি 

#রম্যরচনা


 বিঃদ্রঃ ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে  দেখবেন।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)