প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প (সে আসবে বলে)

কল্পকথার-রাজ্য
0

 



সে আসবে বলে

৯ই বৈশাখ দিনটা আমার জন্য খুবই স্পেশাল । কারণ এই একটা দিনেই আমি আমার সকল কিছু বাদ দিয়ে একজনের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকি । জানি সে আসবে নাহ তারপরও কেন জানি প্রতিবছর এই দিনটাই আমার অন্য কোন কাজেই ভালো লাগে নাহ।

আজ এই তীব্র রৌদুরে তোমার পছন্দের সেই চেকশার্ট পরে দারিয়ে আছি। ঠিক যেভাবে ১৫ বছর আগে দাড়িয়ে ছিলাম। মাঝখান থেকে পাল্টে গেছে কিছু সময় আর কিছু স্মৃতি । বদলে গেছেআমার চেহারা । একগুচ্ছ দাড়ি আর মাথাই এলোমেলো চুলে দাড়িয়ে আছি। এই প্রচন্ড রৌদ্রেও হঠাৎ করেই শরীর ঠান্ডা হয়ে সব লোম দাড়িয়ে গেলো। সবাই আমার দিক অবাগ হয়ে তাকিয়ে ছিল । আমার এই অবস্থা দেখে হয়তো প্রকৃতিও হাসছে। কিন্তু আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছিল। কারণ শরীরের পরিবর্তন হয়েছে মনের নয়। সেই আগের মতোই তোমার সামনে গেলে হ্রদস্পন্দন বেড়ে যায়। কিন্তু আজ কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে তুমি সামনে না থাকার পরও । দুপুর পেরিয়ে বিকাল হয়ে গেছে কিন্তু আমি আর আজ বাড়ি ফিরলাম নাহ। মন তো বলছে তুমি আসবে।

সামনের চায়ের দোকানে বসে চা আর সিগারেট খেলাম। দোকানে বসে ছিল এক রিকশাওয়ালা চাচা। সে এই রাস্তা দিয়ে ১২ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছে। আমার সাথে তার প্রতি বছর এই দিনেই দেখা হয়। কোন দিন কথা বলে নি । তার বয়স ৫০ হবে  বা বেশিও হতে পারে। আমাকে বলব বাবা তুমি প্রতি বছর এখানে দাড়িয়ে কেন থাকো। আমি বললাম এমনি চাচা। চাচা বলল বাবা আমি জানি তুমি কিসের অপেক্ষায় আসো। তোমার চোখ বলে দিচ্ছে তুমি কাউকে খুজছো। আমি বললাম না চাচা আপনি ভুল ভাবছেন। 

বল তোমার কাহিনী আমি শুনতে চাই। আগে বলেন আপনি এই বয়সে রিকশা কেন চালান। তোমার কাহিনী না বললে আমি বলবো নাহ। আচ্ছা তাহলে শুনেন। ১৯৯৭ সাল আমি তখন সবে মাত্র ১০ম শ্রেণিতে পড়ি। ভালোই দিন কাটছিল আমার। আমাদের স্কুল এ একদিন নতুন একটা মেয়ে ভর্তি হল। প্রথমে তার সাথে কথা বলতাম নাহ। পরে আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু আর ওই থেকে ভালো লাগাও। দেখতে দেখতেই আমাদের ৬ মাস কেটে গেল । অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হল। পরীক্ষা শেষ হলে ও আমাকে নিয়ে ওর পছন্দের জাইগা তে নিয়ে গেল। তারপর কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। আমি যখনি কথা বলতে গেলাম তখনি ও বলল এই জাইগা টা আমার যেমন পছন্দ তার থেকেও শত গুন পছন্দ তোমাকে। বলল ভালোবাসত আমায়। আমি নিঃস্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।

আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হল নাহ। ও আমার হাত ধরতেই হ্রদস্পন্দন বেড়ে গেসে। আমি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম হ্যাঁ , খুব ভালোবাসি তোমায়। এরপর ভালোই কয়েক মাস চলল আমাদের প্রেম-কাহিনী। স্কুলের সবাই প্রায় জেনে গিয়েছিল আমাদের কথা। প্রতিদিন ক্লাসে একসাথে শেষ বেঞ্চ এ বসতাম । আর নানা রকম কথাও হাঁসি মজাই দিন কাটছিল। ওর বাবা ছিল ব্যাংক কর্মকর্তা। প্রতিবছর এক জাইগা থেকে অন্য জাইগাই  যেতে হয় । আর মাত্র কয়টা দিন তারপর ওরা অন্য জাইগাই চলে যাবে। (প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প)

আমাদের শেষ দেখা হয় এই জাইগাই। ও বলে ছিল আসবে কোন এক দিন। কিন্তু ২০ বছর পার হয়ে গেসে এখনো আসেনি। বাবা যে আসবে না তার জন্য অপেক্ষা কেন করতাস। আমি জানি সে আসবে তারপরও আজ কেন জানি মনে হচ্ছে সে আসবে। কখনো তাকে খোজনি, কোথায় খুজতাম চাচা সে তো কোন ঠিকানা দিয়ে যায় নি। হঠাৎ করেই বাতাস শুরু হলো । সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বাড়িতে যাচ্ছিল। রিকশাওয়ালা চাচা বলল বাড়িতে চলে যাও । যদি আসার হতো তাহলে অনেক আগেই আসত।

এই বলেই চাচা চলে গেলো। আমি বসেই রইলাম। দেখি এই জোরো বাতাসের মধ্যেও কে যেন দারিয়ে আছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম আর আস্তে আস্তে হাঁটছি । একটু আগাতেই দেখি সে। এক মূহুর্তে আমার দুনিয়া থমকে গেল। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম নাহ এটা স্বপ্ন নাহ বাস্তব । সে আমার নাম ধরে ডাকছে এটা স্বপ্ন হতে পারে নাহ। আমি আরেকটু সামনে গেলাম দেখি সত্যি সে। আমরা দুজন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম নাহ। ও বলল কেমন আসো ? আমি বললাম হুম ঠিক-ঠাক। তুমি কেমন আসো? ভালো। তোমার এই অবস্থা কেন? থাক না এইসব বিষয় । আচ্ছা তোমার বউ আর বাচ্চা কেমন আসে। হুম অনেক ভালো । তোমার ফ্যামিলিতে কে কে আছে? ছেলে , মেয়ে আর শাশুরি আর আমার স্বামী । তো হঠাৎ এইদিক কেন আসলে।  (প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প)

একজন কে বলেছিলাম আসবো কখন। হুম! কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলস। সে আর আগের মতো নেই পাল্টে গেসে। না আমার কাছে পাল্টাই নি । সেই আগের মতোই লাগছে শুধু কিছু দারি আর চুল বড় হয়ে গেসে। আমার কাছে সেই আগের দিনের মতো লাগছে। প্রকৃতিও মনে হয় আমার সাথে কাঁদছে । তাই বাতাস থেকে বৃষ্টি শুরু হল। দুজন মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে ভিজছি । হঠাৎ কোথা থেকে এক গাড়ি এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। আমার কান্না থেমে গেল আর সাথে বৃষ্টিও । দৌড়ে ওর কাছে গেলাম ওকে তুলে নিয়ে হাসপাতাল এর দিক দৌড়ে যাচ্ছি কিন্তু এগোতে পারছি নাহ। পা রাস্তায় হোচট খেয়ে পরে গেলাম। ও বলল আমি আর বেশিক্ষন বাঁচবো নাহ। আমাকে একটা সত্য কথা বলবে । হুম বল । তুমি কি সত্যি বিয়ে করছ। আমি নাহ করি নাই তো। (প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প)

তোমাকে মিথ্যা বলছিলাম তখন। কেন কর নাই বলে ও শেষ  নিঃশ্বাস নিল। আমি চিৎকার করে কাঁদছি কিন্তু চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও পড়ছে নাহ। রিকশাওয়ালা চাচা এসে দেখে এই সে । আমি আর নেই । চাচা দুজন কে রিকশায় তুলে অজানার পথে যাচ্ছে......! 

সে আমার কখনো ছিলও নাহ আর কখনো হবেও না। 

বিঃদ্রঃ ভুলগুলো ক্ষমার দ্রষ্টিতে দেখবেন।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)