হঠাৎ দেখা...
সবার ঘুম ভাঙ্গে এলার্ম এর শব্দে আর আমার ভাঙ্গে বাবার ঘ্যান ঘ্যান শুনে। তুই বড় হয়ে আমার কোন লাভই হয় নাই। আমাকেই রান্না করতে হবে সারা জীবন! একটা বিয়ে করলেই তো হয়। বয়স তো কম হলো নাহ তোর? আর ক দিন পর তো চুল-দাড়িও সাদা হয়ে যাবে। বিয়ে টা করে আমাকে এই রান্না-বান্নার কাজ থেকে মুক্তি দে বাপ আমার! কাল মেয়ে দেখতে যাবো ঠিক ১০ টায় রেডি থাকবি। আচ্ছা আব্বা।
আমার পরিবারে আমি আর আমার বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি দীর্ঘ ৩ বছর যাবত একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। আমার নাম অর্ণব খান। বিয়ে করার তো কোন ইচ্ছে নাই তবুও বাবার জন্য করতেই হবে। কাল সকালে দেখা হচ্ছে গুড নাইট...
এই যে নবাব ৯:০০ টা বাজে এখনো ঘুম থেকে উঠতে পারেন নি। কাল কি বলেছিলাম ভুলে গেছেন নাকি। আচ্ছা আব্বা আপনি ৫ মিনিট বসেন আমি ফ্রেশ হয়ে আসতাসি। আচ্ছা আব্বা চলেন আমি রেডি। কিছু খাবি নাহ না নাকি আজ! "কেন আব্বা ওইখানে কি খেতে দিবে নাহ?" তোরে আর ভালো করতে পারলাম নাহ! আচ্ছা চল!
তুই ডাইরি নিয়ে গিয়ে ঔখানে কি করবি? "আব্বা আপনি তো জানেন আমি যেখানেই যায় সেখানেই আমার সাথে আমার ডাইরিও নিয়ে যায়"।
এখন কি এই বিষয় নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি যেখানে যাবার জন্য রেডি হয়েছেন ওইখানে যাবেন। তারাতাড়ি যায় খোদা লাগছে তো? আচ্ছা চল পেটুক কোথাকার!
২০ মিনিট পরে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে পৌঁচ্ছালাম। আব্বা আর আমি গিয়ে সোফায় বসেছিলাম। কিছুক্ষণ পর মেয়ে আসলো চা-নাস্তা নিয়ে। তারপর সামনের সোফায় বসলো। আব্বার মেয়ে পছন্দ হয়েছে, হবেই নাহ কেন মেয়ে দেখতে মাশাল্লাহ খুব সুন্দরী। আমার পছন্দ হয়েছে এটা আমি আব্বার কানে কানে বললাম। আব্বা আমার সাথে মজা করে বলে চল চলে যায় তুই তো বিয়ে করবি নাহ এখানে বসে থেকে কি হবে?আব্বা চা-নাস্তা ভালো লাগছে!
আমি মেয়ের দিক চেয়ে মুচকি হেসে বললাম আব্বা আমি বিয়ে করমু। আব্বা নাম জিজ্ঞেস করল? বলল আমার নাম আয়েশা। আব্বা বলল তোমার নামটা খুব সুন্দর। পরিবারের সবাই আছে কিন্তু বড় বউ নেই। সে হয়তো রান্নার কাজে ব্যস্ত। আমি যখনি নাস্তা টা চামিচ দিয়ে মুখে দিয়েছে তখনি রান্নাঘর থেকে বাড়ির বড় বউ আসলো। আমার আর খাওয়া হলো নাহ।
হঠাৎ দেখতে পেলাম ৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষটিকে? "ও আমাকে দেখেই প্রতারক বলে চলে গেল!" সবাই অবাক হয়ে বসে আছে? প্রতারক বলে চলে গেলো কেন কেউ বুঝতে পারে নি! আমি যে মেয়েকে দেখতে এসেছি সে ওর ননদ। আমি উঠে চলে আসছিলাম এমন সময় একটা পিচ্চি এসে আমার হাত ধরে বলছিল আপনি চলে যাচ্ছেন কেন?
পিচ্চিটা দেখে কেমন জানি মায়া হলো! বললাম নাম কি তোমার? আমার নাম মিষ্টি! বাহ্ তোমার নামের মতো তুমিও বেশ মিষ্টি দেখতে। ওর মা ওকে ডাকছিল পড়তে বসার জন্য। আমি ওকে একটা চকলেট আর আমার সেই ডাইরিটা দিয়ে চলে এলাম।
ওর মা আর কেউ না আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। ৮ বছর আগে আমি যে দিন প্রথম ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম সেই দিন ওকে প্রথম দেখেছিলাম। ওর মতো মেয়ে আমি আগে কখনো দেখি নি! কি মারাত্মক হাসি তার! চোখের পলক পড়ছে নাহ মনে হয় এক একটা গোলাপ এর পাপড়ি পড়ছে। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম। আমার কিছু বন্ধু আমাকে এইভাবে তাকাতে থেকে দেখে বলে লাভ নাই বন্ধু হেতি তো আমাদের সিনিয়র!
আজ এমন ভাবে দেখছো ভালো কথা প্রতিদিন এইভাবে তাকাওনা দেখলে তো তুমি শেষ মনে কর! দূর আমার কাছে তো কোন দিক দিয়েই সিনিয়র মনে হলো নাহ! হুম ভাই আপনি তো আমাদের সিনিয়র না! এইবলে আমার সব বন্ধুরা আমাকে নিয়ে মজা করতে লাগলো। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরলাম। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেলাম! "মা আমাকে ফোন দিয়ে বলল তোর ভার্সিটিতে কেমন লাগল প্রথম দিন?" আমি বলল ভালোই মা। মার সাথে কথা শেষ করেই তারাতাড়ি শুয়ে পড়লাম।
কিন্তু আজ ঘুম আসছে নাহ! চোখ বন্ধ করলেই সেই হাসি মুখ সামনে আসছে বার বার। কখন জানি ঘুমিয়ে গেছি আমি জানি নাহ? পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে আমার এক বন্ধু রিফাত কে নিয়ে ওদের ক্লাস এর সামনে অনেকক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম। রিফাত তো খুব ভয় পেয়েছিল কিন্তু আমার খুব ভালো লাগছিল! হঠাৎ আমার দিকে তাকাতেই আমি জানালা থেকে সরে যায়।
এইভাবে কয়েক দিন ক্লাসের সামনে যেতাম। যেখানে যেতো সেখানে পিছু পিছু যেতাম। একদিন পিছু পিছু যাচ্ছিলাম হঠাৎ দাঁড়িয়ে আমার কাছে এলো। বলল আমার পিছু পিছু কেন ঘুরতাসো কিছু বলবে কি? নাম কি তোমার? তোমার সাহস তো কম নাহ আমাকে তুমি করে বলতাছ! এই কথাটা শুনেই আমার বন্ধু রিফাত দৌড়ে চলে গেছে ভয় পেয়ে।
আরে ও দৌড়ে চলে গেলো কেন আমি তো মজা করছিলাম। আমাকে ছোট-বড় সবাই তুমি করে বলে, তুমিও বলতে পারো সমস্যা নেই। আর আমার নাম চাঁদনী। আচ্ছা বাই পরে কথা হবে। হুম! কিছু পা সামনে গিয়েই আবার ফিরে এলো। সরি আমি তো তোমার নামটাই জানতে চাই নি। তোমার নাম কি? এইবার আমি আর কিছু বলতে পারছি অনেক চেষ্টা করতাসি কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বেরই হচ্ছে নাহ!
কি হলো বল? আচ্ছা পরে শুনব নি। ও সামনে এগোতেই আমি জোরে বললাম আমার নাম অর্ণব। ও পিছন ফিরে মুচকি হেসে চলে গেলো। আমার বন্ধু চাঁদনী চলে গেছে দেখে আমার কাছে এলো। আমার অবস্থা খুব খারাপ ওর হাসি দেখে। রিফাত কে বললাম ভাই ধর আমাকে আমার না হলে হার্টঅ্যাটাক হবে! তোর জন্য তো যেখানে সেখানে মার খেতে হবে।
আমি বললাম আরে সালা তুই এতো ভয় কেন পাস কিছু হবে নাহ আমি তো আছি! তুই তো বড় সমস্যা। আচ্ছা চল রুমে যায়। খুঁদা লাগছে। আমি বললাম আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে নাহ। রিফাত বলল তুই তো এমন ছিল নাহ তোকে ছোট থেকে আমি চিনি দুপুর হতে না হতেই খাবার জন্য খেলাধুলা ছেড়ে বাড়ি চলে আসতি আর এখন ২ টা বাজে আর তোর খুঁদা লাগে নাই।
দেখ এইসব ভালো নাহ! আর যাই করস প্রেমে পড়িস নাহ। আর ও আমাদের সিনিয়র মনে রাখিস! আমি বললাম আমি সত্যিই প্রেমে পড়ে গেছি। রিফাত বলল তুই আমার থেকে দূরে থাক তুই মরবি সাথে আমাকেও মারবি। আচ্ছা ভাই চল তোর লগে খেতে যাব। তাও রাগ করিস নাহ দোস্ত। তুই ছাড়া আর কেউ নেই এই শহরে। তোর এই আবেগ মার্খা কথাটা কবে বলা বাদ দিবি। আচ্ছা চল খেতে যায়।
পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে আর আগের মতো পিছু পিছু যেতে পারছি না। আর ক্লাসের সামানেও যায় নি। মনে একটা অন্যরকম ভয় লাগছিল। কয়েকদিন ধরে যেন আমার ভয় বেড়েই চলেছে। একদিন ও আমাকে ডাকছে কিন্তু আমি ওর সামনে যেতে ভয় পাচ্ছি। আমার বন্ধুরা সবাই বলল যা তুই। আমি ভয়ে ভয়ে সামনে গেলাম। ও বলল তোমাকে তো দেখাই যায় নাহ।
কেমন আসো? আমি ভালো আছি বলতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়েছে। বলতেই পারছিলাম নাহ। আমার এমন অবস্থা দেখে হাসা শুরু করল। আমি বললাম এইভাবে হেসে নাহ আমার হার্ট-অ্যাটাক হয়ে যাবে তো। কেন আমার হাসি কি তোমার কাছে এতই খারাপ লাগে। আরে নাহ তোমাকে হাসতে দেখলে কি যে লাগে বলে বুঝতে পারব নাহ।কেমন লাগে বল। পরে কখনো বলব নি। আচ্ছা পরে কথা হবে বাই। ওকে!
বেশ ভালোই কাটছিল দিন। পরিক্ষার সময় হয়ে গেছে প্রায় কিন্তু আমি এখনো কিছুই পড়ি নাই। "মা কল দিয়ে বলল তোর পড়াশোনা কেমন চলতাসে সামনে তো আবার পরিক্ষা?" আমি বললাম ভালোই মা! আব্বা কেমন আছে? ভালোই। আচ্ছা মা আমার ক্লাস আছে পরে কথা বলব। টেনশন হচ্ছিল খুব তাই একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টা খাওয়া শেষ না হতেই চাঁদনী এসে গেছে।
তুমি সিগারেট খাও। আগে যদি জানতাম তাহলে তোমার সাথে কথায় বলতাম নাহ এই বলে চলে যাচ্ছিল! আমাকে একটা সাহায্য করবে? আমার তো সামনে পরিক্ষা তুমি তো জানো। কিন্তু আমি তো কিছুই পড়ি নাই একটা স্যার বা ম্যাডাম ঠিক করে দিতে পারবে? আচ্ছা তোমার স্যার লাগবে নাকি ম্যাডাম? একটা হলেই হবে! কাল বিকাল ৪ টাই তোমার বাসায় সে চলে যাবে। আচ্ছা ধন্যবাদ! বাই।
সন্ধ্যাবেলায় চায়ের দোকানে সব বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। আমাকে দেখেই রিফাত বলল মামা আর একটা চা আর একটা সিগারেট দেন। আমি বললাম চা নে সিগারেট কার জন্য চিচ্ছিস? কেন তোর জন্য! আমি সিগারেট খাই নাহ। বাহ্ আজ কি সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠেছে নাকি? তো স্যার আপনি কখন থেকে সিগারেট খাওয়া বাদ দিছেন আর কেন দিছেন?
আরে আমি যদি সিগারেট খাই তাহলে চাঁদনী আর আমার সাথে কথা বলবে নাহ। তাই তো বলি সালা আজ সিগারেট কেড়ে নিল নাহ কেন? তোদের মতো কি সিগারেট খেয়ে জীবন নষ্ট করব নাকি এখন পড়াশোনা করার বয়স। কাল থেকে প্রাইভেট পরব সামনে তো পরিক্ষা। পড়াশোনা তো একটারো নাই আল-টাইম শুধু আড্ডা দেস। রিফাত বাহ্ ভাই বাহ্ ভালো জ্ঞান দিতে শিখে গেছিস? আচ্ছা তোরা থাক আমি রুমে যাব।
আর কেউ পড়ুক বা না পড়ুক আমি রিফাতকে আমার সাথে প্রাইভেট পরতে বলেছি। ৪ টা ১০ বেজে গেছে এখনো স্যার বা ম্যাডাম কেউ ই আসলো না? চাঁদনী কি তাহলে আমার সাথে কাল মজা করে ছিল। আমি একটু রেগে নিচু হয়ে পকেট থেকে ফোন বের করতেছিলাম তখনি রিফাত বলে ঐ দেখ তোর ম্যাডাম আসতাসে। আমি চেয়ে দেখে চাঁদনী ছাই রঙের একটা শাড়ি হাতে একটা ব্যাগ আর চোখে একটা চমশা সরি চশমা পড়া ছিল। আজ ওকে একদম অন্য রকম লাগছে।
শাড়িতে বেশ মানিয়ে ছিল ওকে। ম্যাডাম ম্যাডাম লাগছে তোমাকে একদম? কেন আমি কি তোমাকে পড়াতে পারব নাহ। আমি সেটা কখন বললাম। এখানে কি দাড়িয়ে থাকবা নাকি রুমে গিয়ে বই খুলবে? রিফাত বলল আচ্ছা ম্যাডাম চলেন। রুমে গিয়ে রিফাত আর আমি বই খুললাম। তারপর ও রিফাত বই নিয়ে পড়াচ্ছিল কিন্তু আমার তো কিছুতেই পড়তে ইচ্ছে করছিল নাহ!
কি জানি বকবক করতাসে আর রিফাত শুধু মাথা নাড়তাসে আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিক তাকিয়েই আছি। কোন এক অজানা মায়ায় আটকে গেছি। আমি বললাম আজ এই পর্যন্ত এক দিনে এতো দেখব নাহ। চাঁদনী বলতাসে কি বলছ আবুল-তাবুল। কেবল তো একটা টপিক এর এক অংশ শেষ হয় নাই। আজ আর নিতে পারব নাহ, আজ এই পর্যন্ত।
আচ্ছা থাক তোমরা তাহলে আমি আজ যাই। কাল আবার এই সময় আসব রেডি থেকো। আমি বললাম আর একটু থাকলে হয় নাহ! এতো তারাতাড়ি করে যাওয়ার কি আছে? আরে আজব তো তুমি বললে তো আজ আর পড়বে নাহ! আচ্ছা বাই।
আরে দোস্ত রিফাত আজ ওকে কি লাগছিল! দেখ তুই না ভুলে যাচ্ছিস ও আমাদের সিনিয়র। আর ও তোকে কখনো ভালোবাসবে নাহ। তুমি করে বলতে বলেছে বলেই লাফালাফি করতাছস দেখিস ভালো হবে নাহ লাফালাফি বাদ দে ভাই। আরে সালা বাইরে যা তো তুই। আর কাল থেকে তুই ৫ দিন প্রাইভেট পড়বি নাহ। কেন কেন? আরে সালা তুই অন্য ম্যাডাম ঠিক কর। আমারটাকে তুই কেন দেখবি? এতদূর পর্যন্ত গেছে গাঁ। আচ্ছা তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর।
পরের দিন ৪ টাই চাঁদনী এসেছে। এসে দেখে আজ রিফাত নেই। বলল রিফাত কই? আমি বললাম একটা কাজে বাইরে গেছে। আচ্ছা বই বের কর। ও পড়াচ্ছিল আর আমি এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছিলাম। কি করব ওকে দেখে সবকিছুর কথা ভুলে যায়। হঠাৎ কানে ওর পড়ার শব্দ টা আসছিল নাহ! ও আমাকে বলল কি করতাসো তুমি? আমি পড়াচ্ছি আর তুমি এক দৃষ্টিতে আমাকে দেখেই যাচ্ছ এইভাবে পড়াশোনা হবে। তোমার নাহ সামনে পরিক্ষা।
পড়ে নাহ চোখের পলক, কি তোমার রুপের ঝলক! বাহ্ ভালোই ছন্দ বলতে পারেন আপনি? তাহলে আমার কি দরকার পরিক্ষা তে ছন্দ লিখে আসবে নি। সরি চাঁদনী! আর এই রকম করব নাহ! ওর কথা শুনে পড়াশুনা করে বেশ ভালোই পরিক্ষা দিলাম। পরিক্ষা শেষ হয়েছে তাও আমি এখনো ওর কাছে পড়ি। আগে পড়তাম বই এখন রোজ মায়ার বেড়াজালে আটকা পড়ি। রোজ ওর সাথে ঘুরতে যাই রিকশা দিয়ে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একসাথে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ছিলাম। রোজ বিকেলে সেই ফুচকা খাওয়া।
এক দিন ভাবলাম ওকে বলল। তাই ৫ টাই ঝিলের ধারে আসতে বললাম। আমাদের বাসা থেকে একটু দূরেই ঝিলটা। ওকে শাড়ি পরে আসতে বলেছিলাম আর আমি পাঞ্জাবি। ও এসে কেন এখানে ডেকেছো? তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। আমি জানি তুমি কি বলবা। আমাকে ভালোবাসো এটাই বলবা তো? আমার তোমাকে ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের এই সম্পর্ক কোনভাবেই সমাজ মেনে নিবে না। তাই এটাই ভালো হবে তুমি আমাকে ভুলে যাও।
আমি তোমাকে কখনো ভুলতে পারব নাহ! চাঁদনী বলল, "এতো ভালোবাসা ভালো নয় অর্ণব, ভুল হয়ে যায় তাতে!" তুমি চাইলে আমরা আগের মতো ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে পারি। এই কথা বলে ও চলে গেলো।
২ দিন যাবত তোমায় দেখি নাহ। কেমন আছো তুমি? সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন; তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশি দেখি, যখন দেখি নাহ। আমি ভালো নেই চাঁদনী। এই না দেখে থাকাটা অনেক কষ্টের। তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবই বা কি করে। তোমারও কি খারাপ লাগছে।তুমি বলেছিলে সমাজ আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে নাহ। আসলেই কি তাই, আমার জন্য একটুও খারাপ লাগছে নাহ। তাহলে কেন আমার খারাপ লাগছে, কেন লিখতে গিয়ে আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। নিজের ভালো টা নিজেকেই দেখতে হবে; তা সমাজ এসে ঠিক করে দিবে নাহ চাঁদনী। ভালোবাসা বদলায় না নিয়ম ও সময়ের সাথে রুপ পরিবর্তন হয়ে যায়। চায়ের মধ্যে বৃষ্টির পানি ঢেলে খাওয়া। ছাদে উঠে একসাথে তারা গুনা আর বাদাম ছোড়ে মারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলো কখনো ভুলার নয় চাঁদনী। ভালোবাসা টা শুধুই তোমার জন্য। ভালো থেকো আমার ভালোবাসা।
চিঠি টা রিফাতের হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। পরের দিন ভার্সিটিতে সবার সামনে এসে জড়িয়ে ধরে বলে ভালোবাসি তোমায়, খুব ভালোবাসি। সবাই আমাদের দিক অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আমাদের কিছু যায় আসে নি বা ভয়ও লাগে নি। ভালোবাসলে ভয় কোথায় জানি হারিয়ে যায়। সেই দিন রিফাতও আর আমাকে বাধা দেই নি। ও বলেছিল ভালো থাক তোরা।
বেশ ভালোই দিন কাটছিল। আমি আর চাঁদনী একদিন বিকালে রিকশা দিয়ে ঘুরছিলাম কাকে দেখে যেন একদম চুপ হয়ে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে ছিল ও বলল কেউ নাহ আর রিকশাওয়ালা মামা কে বলল একটু তারাতাড়ি চালান। আমি ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে এলাম। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে এলাম রিফাত কে নিয়ে, খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন চাঁদনী কল দিয়ে বলে আজ আমাকে আমার বাড়ি যেতে হবে ২ দিন পর আমার চাচাতো বোনের বিয়ে। আমি বললাম সাবধানে থেকো আর যাওয়ার পর কল দিও। সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু এখনো চাঁদনী কল দেয় নি। আমি বার বার কল দিচ্ছি কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। এমন তো কখনই হয় নি,তাই চিন্তা হচ্ছিল। রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো কিন্তু এখনো ফোন বন্ধ।
এভাবে কেটে গেল দুদিন তারপরও ফোন বন্ধ। একটার একটা সিগারেট খাচ্ছি তারপরও চিন্তা দূর হচ্ছে নাহ। হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো, আমি সাথে সাথে কলটা ধরলাম। কেঁদে কেঁদে কথা বলছে চাঁদনী।"আমি বললাম কি হয়েছে তোমার আর ফোন বন্ধ কেন তোমার?" কাল আমার বিয়ে অর্ণব। বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিচ্ছে আমাকে,ঐ দিন তোমার সাথে রিকশা দিয়ে ঘুরতে দেখছিল আমার চাচা। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছিল ওর কথা শুনে।
আমি একদম কথা বলছিলাম না। ও বলল আজ রাতের ট্রেনে করে পালিয়ে যাবে। আমি কিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দিলাম। তারপর বলল পরে কথা হবে এখন কেউ কথা বলতে দেখে ফেললে সমস্যা হবে। আমি রিফাত কে সব বললাম, রিফাত বলল তুই চিন্তা করিস নাহ আমি তোকে সাহায্য করব।
তার একটু পর আমি ব্যাগ গুচ্ছাছিলাম তখন মা কল দিয়ে বলে তোকে অনেক দিন ধরে দেখি না বাবা, তাই আজ আমি আর তোর বাবা তোর ওইখানে আসতাছি। আমি একটু খুশি হলাম। কারণ মা-বাবা সাথে দেখা করতে পারব। আচ্ছা তাহলে তোমরা আসো। আমি চাঁদনীর কল এর অপেক্ষা করছিলাম। মা-বাবার আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
৫:৫০ এ একটা কল আসলো হাসপাতাল থেকে মা আর নেই। বাবা কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে। আমার হাত থেকে ফোনটা মাটিতে পড়ে গেল। আমি হাসপাতালে কেমনে যে পৌঁচ্ছায়ছি তা জানা নেই।আমি চোখে শুধু ধোঁয়াশা দেখছিলাম। মা আমাকে আর শেষ দেখাটা দেখতে পেল নাহ। পরে সবাই মিলে মার লাশ নিয়ে বাড়ি গিয়ে করব দেই। বাবা একদম ভেঙে পড়ছে তাই বাবার সামনে আর কান্না করতাম নাহ।
এতকিছুর ভীড়ে চাঁদনীর কথা প্রায় মনেই নেই। অকে মার কথাটাও বলতে পারি নি। তাই পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল খুঁজছি। পরে মনে হল আমি ফোন টা আমার রুমেই ফেলেই গ্রাম এসে পড়েছি। রিফাত এর কাছে আমার ফোনটা ছিল কিন্তু ও আমাকে এই অবস্থাই কিছু বলতে চাই নি। দুইদিন পর ও আমাকে আমার ফোনটা দেয়। ফোন হাতে নিয়ে দেখি চাঁদনী ৫০ টার বেশি কল করে ছিল। আর শেষে একটা মেসেজ দিয়েছিল প্রতারক। রিফাত বলল ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আমি প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি।
একদিকে কলিজার টুকরা মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো অন্যদিকে গার্লফ্রেন্ড এর বিয়ে হয়ে গেছে। রিফাত না থাকলে হয়তো আমি পাগল হয়ে যেতাম। ও আমাকে বলল তুই এইভাবে ভেঙে পড়লে হবে তোর বাবাকে কে দেখবে। এরপরে কিছু মাস পর গ্রাম ছেড়ে বাবাকে নিয়ে নতুন একটা শহরে চলে আছি। যেখানে ভালোবাসার অভাব নেই,শুধু রাখার মানুষগুলা নেই।
পরের দিন আবার ওদের বাড়ির দিক গেলাম যদি একটু দেখতে পায়। এতোক্ষণে হয়তো আমার ডাইরিটি পড়া শেষ। ওদের বাড়ির সামনে একটা দোকানে বসে চা আর সিগারেট খাচ্ছি। হঠাৎ করেই আকাশটা কালো হয়ে আসলো। ও আমাকে জানালা দিয়ে দেখেই দৌড়ে চলে আসল। আমি চা খেয়ে সিগারেট টা ধরাচ্ছি কিন্তু আজ আর আগুন ধরছে। ও আর কোন কথা বলছে না।
চুপ করে আমার সামনে খামের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সবশেষে সিগারেট টাই আগুন ধরেছে। আমি রাস্তা পার হচ্ছি এমন সময় ও অর্ণব বলে ডাকাতে আমি পিছন ফিরে তাকিয়েছি। আজ কেন জানি ওকে অন্য রকম লাগছে। হটাৎ কোথা থেকে একটা ট্রাক এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। চাঁদনী চিৎকার করে আমার সামনে এসে জড়িয়ে ধরে বলে আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো।
আমার শরীর রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে। চাঁদনী বলল আমাকে একা রেখে তুমি কেন দূরে সরে যাচ্ছ। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো নাহ। "এতো ভালোবাসা ভালো নয় চাঁদনী, ভুল হয়ে যায় তাতে!" তুমি বলেছিলে না আমায়। আর কাছে আসার জন্য কখনো কখনো দূরে যেতে হয় চাঁদনী। আমাকে আর একটা সাহায্য করতে পারবে। আমি ছাড়া আমার বাবার আর কেউ নেই পারলে তাকে একটু মাঝে মাঝে দেখতে যেও। ভালো থাকো ভালোবাসা..........
অসমাপ্ত
লেখক : আরিফুল ইসলাম মিম
বিঃদ্রঃ ভুলগুলো ক্ষমার দ্রষ্টিতে দেখবেন।