অস্পর্শ ভালোবাসা-৫ম পর্ব
©শাহরিয়ার
আরাফ পাগলী কোথাকার যে বয়স নিজের কাউকে ভালোবাসার সে বয়সে অন্যর ভালোবাসার গল্প শুনতে চায়।
.
নুপুর আপনি বলবেন নাকি আমি?
.
আরাফ নাকি আমি কি?
.
নুপুর আমি কান্না করে দিবো এখুনি।
.
আরাফ তুমি কান্না করতে পারো?
.
নুপুর ফিক করে হেসে দিয়ে কেন কান্না করতেতে পারবো না কেন?
.
আরাফ কান্না করারতো একটা কারণ লাগে তাইনা? কারণ ছাড়া কি করে কান্না করবে?
.
নুপুর এই যে আমাকে অবহেলা করছেন কথা শুনছেন না। এটাই কারণ।
.
আরাফ নিয়তি মানো তুমি?
.
নুপুর কেন মানবো না? ভাগ্যের লেখনই নিয়তি। আর সবাইকে ভাগ্যের লেখন মানতে হবে।
.
আরাফ ঠিক তাই, আমরা কেউ ভাগ্যকে বদলাতে পারবো না। জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। আমার আর প্রিয়ার প্রথম দেখা হয় এক বৃষ্টির সন্ধ্যায়। আমি তখন ভার্সিটিতে থেকে বাসায় ফিরছিলাম। বাহিরে কখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে আমি রিক্সায় বসে বৃষ্টি দেখছি। বৃষ্টি বরাবরের মতই আমার পছন্দের ছিলো। এক হাত বাহিরে বের করে বৃষ্টি স্পর্শ করছি আর আনমনে গান গেয়ে চলেছি। হঠাৎ দূরে কিছু ছেলে মেয়েকে বৃষ্টির পানিতে লাফাতে দেখা যাচ্ছিল। যতই কাছে যাচ্ছিলাম ততই স্পষ্ট ভেসে উঠছিলো একটি মেয়েলি চেহারা। সব বাচ্চা গুলোর চেয়ে সে বড়। যখন রিক্সা তাদের কাছে আসলো আমি আমার মনে হলো এতো গুলো বছর যার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম তাকে আমি পেয়ে গেছি। মায়াবী চেহারার প্রিয়াকে আমি সেদিনই প্রথম দেখি। রিক্সা থেকে যতটা সময় দেখা গিয়েছি আমি শুধু চেয়েই ছিলাম। ওকে দেখায় এতোটা ব্যস্ত ছিলাম যে ওর নাম ঠিকানা কিংবা ফোন নাম্বারটা নিতেও আমি ভুলে গিয়েছিলাম। যখন বাসায় আসলাম তখন মনে পড়লো যে আমি সব কিছুই ভুল করেছি। আমি আবারও ছুটলাম সেখানে ওর সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু ওকে আর পেলাম না। মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না। মন শুধু ছটফট করছিলো প্রিয়াকে দেখার জন্য।(আবেগি ছোট গল্প)
.
.
এরপর আমি প্রতিদিন ছুটে যেতাম সেখানে এক নজড় দেখার জন্য। কিন্তু দিনের পর দিন যেতে থাকলো আমি প্রিয়াকে দেখার জন্য ছুটে আসতে থাকলাম। প্রায় মাস খানেক চলে যাবার পরেও প্রিয়াকে আর দেখতে না পেয়ে আমি হতাশ হয়ে গেলাম। ঐ জায়গায় যাওয়া কমিয়ে দিলাম। আর মনকে শান্তনা দিতে শুরু করলাম এই বলে যে সে যদি আমার ভাগ্যে থাকে তবে অবশ্যই তাকে আমি খুঁজে পাবো। দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেলো। মনে মনে আমি সব খানে খুঁজে ফিরছি প্রিয়াকে কিন্তু কাউকে বলতেও পারছি না। কারণ তখন না আমি জানতামও কোথায় থাকে আর না জানতাম ওর নাম।
.
.
এক বিকেলে বন্ধুদের সাথে নিয়ে গিয়েছি বানিজ্য মেলায়। হাজার মানুষের ভীড়ে আমার চোখ শুধুই প্রিয়াকে খুঁজে ফিরছিলো। হয়তো সৃষ্টিকর্তা সেদিন আমার সহায় ছিলেন। হুট করে প্রিয়া আমার চোখের সামনে পরে। সাদা রঙের একটা ড্রেস পড়া ছিলো প্রিয়া। এত ভীড়ের মাঝেও যেন ও ছিলো সবার চেয়ে আলাদা। আমি দ্রুত বন্ধুদের ফেলে ওর দিকে হাঁটা শুরু করলাম। যেন কোন ভাবেই ওকে হারিয়ে না ফেলি। আমি হাঁটতে হাঁটতে ওর খুব কাছে চলে যাই। ওর সাথে ওর পরিবারের সকলেই ছিলো। এতো কাছে যেয়েও যেন আমি অনেকটাই দূরে সরে আছি। আমার মনে হচ্ছিল সে সময় আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমি ওর সাথে কথা না বললে কোন ভাবেই আর থাকতে পারবো না। কিন্তু কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
.
.
প্রিয়া ওর পরিবারের সবার সাথে এখানে সেখানে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আর আমি ওদের পিছু পিছু হেঁটে বেড়াচ্ছি আমার অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে। প্রিয়া কোন ভাবে ব্যাপারটা খেয়াল করেছে আমি ওকে ফলো করছি। ও বার বার পিছু ফিরে তাকাচ্ছে। ওর পরিবারের লোকজন একটা দোকানের ভিতর ঢুকে। তখন ও নিজেই আমাকে সুযোগ করে দিলো কথা বলার জন্য। ও দোকানের চেয়ে একটু দূরে সরে আসতেই আমি ওর সামনে ছুটে যাই।
.
.
ওর সাথে প্রথম কথা বলার সময় আমার হার্টবিট কতটা স্পীডে চলছিলো আমি জানি না। প্রিয়াই আমার সাথে প্রথম কথা বলে। আমাকে বলে এভাবে পিছু নিয়েছেন কেন? মা বাবা দেখলে আপনার খবর আছে। আমি বললাম তোমাকে দুই মাসেরও বেশী সময় ধরে খুঁজে চলেছি। ঐদিন তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখার পর থেকেই আমি তোমাকে খুঁজে চলেছি। প্রিয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে দ্রুত নিজের নাম্বারে ফোন দিয়ে ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বললো ফলো করবেন না। আমি আপনাকে ফোন দিবো। বলেই ওর পরিবারের কাছে চলে গেলো।
.
.
আমি নাম্বার নিয়ে ছুটে গেলাম বন্ধুদের কাছে। আমার মনে হয় বেশ কয়েক বছরের ভিতর ঐ দিন আমি এতোটা আনন্দ হয়েছিলাম যে বলে বুঝানো যাবে না। সব বন্ধুদের কে নিয়ে সেদিন পার্টি করলাম। বানিজ্য মেলা থেকে ফিরে এক সেকেন্ডের জন্যও ফোন থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। অপেক্ষার প্রহর যেন সত্যিই আমার শেষ হচ্ছিল না। মা আমাকে বার বার খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে চলেছে। আমি মাকে খেয়ে শুয়ে পড়তে বললাম। আমি বার বার ফোনটা হাতে নিয়েও প্রিয়ার নাম্বারে ডায়াল করছি আর কেটে দিচ্ছি। অবশেষে রাত বারটা এক মিনিটে প্রিয়ার নাম্বার থেকে কল আসলো।
.
.
প্রিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা আপনার নাম কি?
.
আমি উত্তর করলাম আমার নাম আরাফ।
.
প্রিয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো আরাফ আগে আমাকে উইশ করেন আজ আমার জন্মদিন। আর আপনি আমাকে এ বছর প্রথম উইশ করবেন। আমার কাছে সে সময় মনে হলো আমি পৃথিবীর সব চেয়ে ভাগ্যবান মানুষদের একজন। সৃষ্টিকর্তা যেন সব সুখ আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। আমার কাছে সব কিছু নাকটের মত মনে হচ্ছিল। আমি সেদিন মেনে নিয়েছিলাম জীবনের বাস্তবতা নাটকের চেয়েও নাটকীয়। আমি প্রিয়াকে উইশ করি আমাদের মাঝে দীর্ঘ সময় কথা হয়। একটা সময় আমিই প্রিয়াকে বলি কাল আমরা দেখা করি। প্রিয়া বলে ওর জন্মদিন কাল সবাই মিলে ঘুরবে। জন্মদিনে বাড়িতে তেমন কোন আয়োজন হয়না। ওর বাড়ির কেউ আসলে জন্মদিন পালন করতে চায় না। আমি ওকে বললাম তোমরা ঘুরাশেষ করে না হয় কোন উসিলায় সন্ধ্যায় আমার সাথে দেখা করো। প্রিয়া বললো ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো। আর বললো ওকে যেন ফোন না দেই। ফ্রী হয়ে ও আমাকে ফোন দিবে।
.
.
সারা রাত দু'চোখে আমার ঘুম ছিলো না। ভালোবাসার মানুষের জন্মদিন আমার আনন্দের শেষ ছিলো না। সারা রাত প্লান করছি কি করে ওকে সারপ্রাইজ দিবো। কি আয়োজন করবো কোথায় যাবো। হাতে কতটুকু সময় পাবো। এসব ভাবতে ভাবতে রাত পার হয়ে যায়।
.
.
সকালে আমার ক্লোজ দুইজন বন্ধুকে ডাক দিয়ে এনে ওদের সহযোগিতায় একটা সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করি। বনানীর ছোট একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। বড় সাইজের একটা কেক নিয়ে আসি। সাথে নানান রকম আয়োজন। মনের মাঝে ভয় নিয়ে সব করতে থাকি যার জন্য করছি সে আসতে পারবেতো? সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। প্রিয়ার ফোনের অপেক্ষায় আমি। বন্ধুরা আমাকে বলছে আসবে তুই চিন্তা করিস না। দেখবি তোর ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ও আসবে। আমারও কেন জানি খুব করে মনে হচ্ছিলো প্রিয়া আসবে যে ভাবেই হোক না কেন প্রিয়া আসবে।
.
.
সন্ধ্যার কিছু সময় আগে প্রিয়া ফোন দেয়, আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করি। প্রিয়া আমাকে প্রশ্ন করে কেথায় আছি? আমি ওকে জানাই বনানীতেই আছি এবং রেস্টুরেন্টের ঠিকানা ওকে দেই। অল্প সময়ের ভিতরেই প্রিয়া ওর এক বান্ধবীকে সাথে নিয়ে সেখানে চলে আসে। আমার আয়োজনে প্রিয়া অবাক হয়ে যায়। প্রিয়া এক ঘন্টার মত আমাদের সাথে ছিলো। প্রিয়ার সে উচ্ছাস আজো আমার চোখে মাঝে মাঝেই ভেসে উঠে। এক পর্যায় প্রিয়া কান্না করে দেয় আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। প্রিয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে এটা কষ্টের কান্না নয়। এটা খুশির কান্না আমার জীবনে এটাই প্রথম জন্মদিন যেখানে এতো সুন্দর আয়োজন হয়েছে। আমি কেক কেটেছি যতদিন বেঁচে থাকবো আমি এই দিনটাকে মনে রাখবো। একটা সময় প্রিয়া চলে যায়। আমিও বাসায় ফিরে আসি।
.
.
মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে।
.
নুপুর চলেন নিচে নেমে যাই। আরেক দিন আপনাদের ভালোবাসার গল্প শুনবো।
.
আরাফ হ্যাঁ চলো। আমিও ফ্রেস হয়ে মসজিদে যাবো।
.
দু'জন এক সাথে নিচে নেমে আসে। নুপুর রান্না ঘরের দিকে আর আরাফ তার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
.
আরাফের মুখ থেকে ভালোবাসার গল্প শুনে নুপুরের মনে এক অদ্ভুত রকম ভালোবাসা কাজ করে নুপুর মনে মনে ভাবে ইস এমন করে যদি কেউ আমাকে ভালোবাসতো। এমন করে যদি কেউ আমাকে সারপ্রাইজ দিতো। নিজের ভিতর থেকেই বেরিয়ে আসে
"কেউ আসুক আমাকেও আপন করে নিক
নিজের মনের মত করে আমাকেও ভালোবাসুক"
সংগ্রহঃ বইপোকা গ্রুপ