শেষ চাহনি গল্প
সন্ধ্যা শেষ হয়ে প্রায় রাত হয়ে গেসে কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাস এসে পৌঁছাইনি । বাসের অপেক্ষায় বসে রইলাম বাস স্ট্যান্ড এ । ঠিক ৮ টাই বাস আসলো । আমি মা আর ছোট ভাই ঠাকুরগাঁও থেকে বাড়ি আসছিলাম । বাসে উঠতেই একটু অবাক হলাম। ঠিক ৯ দিন আগে যেই লোকগুলো আমাদের সাথে বাসে উঠেছিল তারা আজ আবার ওই একই বাসে একই সময়ে ।
মাঝ থেকে ৯ দিন যে চলে গেসে এটা মনেই হলো নাহ। আমরা আমাদের সিট এ গিয়ে বসলাম। ওরা ছিল ৬ জন । আমাদের দিক অনেকক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলো ওইদিন আপনারাই আমাদের সাথে এসেছিলেন নাহ। আম্মু বলল হ্যাঁ আমরাই ছিলাম। তাদের সাথে ভালই কথাবার্তা হলো আম্মুর। বাস এখনো ছারে নি । আম্মু জানালার পাশের সিটটাই বসে ছিল । আর আমি তার পাশের সিটে। কিন্তু আমার ঠিক পাশের সাইট এর একটা সিট এখনো খালি আসে ।
বাস ছেরে দিয়েছে কিন্তু কিছুক্ষন যাওয়ার পর আবার কেন জানি থামল । এমন ভাবে বাস থামিয়েছে যে আমার হাত থেকে প্রায় আমার ফোনটা পরে গেছিলো। আমি ফোন তুলে ড্রাইভার কে গালি দিতে গিয়েও থমকে দারিয়ে রইলাম । দেখি এক সুন্দরি রমনি উঠছে বাসে। ও পিছন ফিরে তাকিয়ে কাকে যেন বাই বলছে। আমি দারিয়ে আসি দেখে আম্মু বলল দারিয়ে আছিস কেন? তখন আমি বসে পরলাম। দেখি যে সিটটা খালি ছিল ওইখানে এসে বসলো । আমি ফেসবুকে গিয়ে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করছিলাম।
হঠাৎ তার দিক তাকাতেই দেখি একা একা বসে তার ভালো লাগছিল নাহ এমন মনে হল। আমি আর আগ বারিয়ে কিছু বললাম নাহ ।কারণ আমি একটু বেশি ভদ্র । হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছিলাম। হঠাৎ দেখি এই যে হেলো বলে কে যেন ডাকছে। আমি হেডফোন টা কান থেকে খুলে দেখি ওই মেয়ে টা । একটু ভাব নিয়ে বললাম হুম বলেন । আমাকে বললো একা একা আপনার ভালো লাগতাসে?
আমি বললাম ভাল লাগবে নাহ কেন ? পাশে সিটে যদি আপনার মত কোন সুন্দরী বসে থাকে তাহলে তো সব ছেলেই ভাল লাগবে। এই যে মিষ্টার আমি জানি আমি সুন্দর সেটা আপনাকে বলতে হবে নাহ! তাহলে কি বলল। কিছু নাহ । আমার একা একা ভাল লাগছিল নাহ তাই আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হল আর সবাই তো পরে পরে ঘুমাচ্ছে একটু রেগেই বলল ।
আমি বললাম আপনি রেগে গেলে আপনাকে আরও কিউট লাগে । আপনি কি আমার সাথে ফ্লাট করতাছেন । আমি বললাম কই নাহ তো। আপনি এমন ভাবে কথা বলতাছেন যেন আপনে আমাকে আগে থেকেই চিনেন। চিনি নাহ তো এখন নই চিনলাম। আচ্ছা আপনার নাম কি? বলবো নাহ আপনাকে। আচ্ছা আমি সুন্দরী রমনি করেই ডাকবো তাহলে । আপনি এবার থামেন।
একটু বেশি কথা কন আপনি। আমি বেশি কথা কই সবাই বলে আমি ভাল ভাবে কথাই বলতে পারি নাহ । আচ্ছা এখন নাম টা তো বলেন। আমার নাম চাঁদনী। আমি বললাম আমার আকাশের কোঁথাও তো তারা সারা আর কিছু নেই তাহলে আপনি কোথাই থেকে উদয় হলেন। আমার কথা টা শুনে এমনভাবে হাঁসা শুরু করল যে শেষে আমাকেও হাসতে হল। আচ্ছা কবি সাহেব আপনার নাম কি? বললেনই তো কবি । আপনি আজ এতো হাসাইছেন যে পেট ব্যাথা হয়ে গেসে। পেইনকিলার দিব নাকি।
নাহ থাক ওইটা খেয়ে যদি আরও বেশি হাঁসি । আপনার হাসিটা অনেক জোস । থামেন আর বলতে হবে নাহ। এখন তো নাম টা বলেন। আমার নাম আরিফুল মিম । আপনার নাম মিম বলেই আবার হাসা শুরু করল । আমি একদম চুপচাপ হয়ে গেলাম। হাঁসি থামিয়ে বলে কি কবি সাহেব হঠাত চুপ হয়ে গেলেন কেন? রাগ করছেন আমি এই রকমই একটু বেশি হাঁসি । অনেকে তো বলে মেয়েটা পাগল হয়ে গেসে।
আচ্ছা আপনি যাচ্ছেন কোথাই ? আমি আমার বাড়ি যাচ্ছি । আমার বাড়ি সরিষাবাড়ি। আপনি কোথাই যাচ্ছেন? আমি টাঙ্গাঈল জাবো । ওইখানে কি আপনার বাসা । নাহ ওইখানে আপুর শুশুরবাড়ি । আমি ঐখানে গুরতে যাচ্ছি। এর আগেও অনেক গেসি কিন্তু আজকের মতো এমনভাবে যাই নি। আমি বললাম এমনভাবে মানে? মানে হলো আজ এতো হাসিখুশি ভাবে যাচ্ছি আর আগে তো কিছু আহাম্মকদের সাথে গেসি এরে শুধু পরে পরে ঘুমাই। এবার আমার খুব হাঁসি পেল ওর কথা শুনে।
দুইজনই হাসতে থাকলাম। কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম। কি বলবো আর ভেবে পাচ্ছিলাম নাহ। কিছুক্ষন পরে বলে আপনার ফেসবুক আইডির নাম কি ? আমি বললাম আরিফুল ইসলাম মিম আর আপনার টা ? বলল যখন রিকুয়েস্ট দিব তখন দেখবেনই । এই বলে মাথা নিচু করে মুচকি হেসে আমার দিক তাকালো। আহ কি তার চাহনি আমি দেখে যেন হারিয়ে গেলাম।
আমাকে ডেকে বলে এই যে মিষ্টার কই হারিয়ে গেলেন। হঠাৎ করে আমাদের বাস টা অন্য একটা বাসের সাথে ধাক্কা লাগে আর সবাই জেগে উঠে । তেমন কিছু হই নাই শুধু বাস এর সামানের কাচ টা ভেগে গেসে। আমি পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নেই । আম্মু কে বললাম আমার পাশের সিটে এ যে মেয়েটা ছিল ও কই । আম্মু বলল কই এইটা তো আগে থেকেই খালি ছিল ।
তুই তো ঘুমিয়ে গেসিলি অনেক আগেই । তার মানে ওইটা স্বপ্ন ছিল। পরে বাস থেকে কাচ নামিয়ে আবার বাস চলতে শুরু হলো । কিন্তু এইবার আর আমার ঘুম ধরলো নাহ। ধরবেই বা কেমনে যা চেহারা ছিল বলে বুজাতে পারবো নাহ।
#শেষ চাহনি গল্প
#রম্যরচনা
বিঃদ্রঃ গল্পটি কিছুটা বাস্তব আর কিছুটা আমার মনগড়া । ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।